ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাস ও ঢালের ধারণা

ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাস  ঢালের ধারণা

আমরা যারা অর্থনীতি পড়ি তারা জানি যে গণিতের এই ক্যালকুলাস শাখা অর্থনীতির জন্য কত গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। অনেকেরেই একটা সাধারণ প্রশ্ন থেকেই যায় যে আমরা ক্যালকুলাস কেন ব্যবহার করবো? ক্যালকুলাস না থাকলে কি অসুবিধা হতো? ঢালের ব্যাপারটাই বা কি?

আমার এই পোস্টটিতে যদি তারা সামান্যতমও উপকৃত হয় তাহলে আমার লেখা সার্থক হবে। এই পোস্টে শুধুমাত্র ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাসের প্রাথমিক আলোচনা করা হয়েছে।

ঢাল শুরু করার আগে আমি প্রথমে একটি বাস্তব উদাহরণ দিয়ে ক্যালকুলাসের শাখা ডিফারেন্সিয়েশন নিয়ে আলোচনা করতে চাই তাহলে ঢালের ব্যাপারটি বুঝতে অনেক সুবিধা হবে।

আমার ভোজনরসিক বন্ধু ফাত্তাহকে আমার বাসায় দাওয়াত করলাম খাওয়ানোর জন্য। সে আমার বাসায় আসার আগেই অনেক সময় ধরে না খেয়ে ছিল কারণ আমার বাসাই ভরপেটে খাবে বলে। এইদিকে আমার মাথাতেও শয়তানি বুদ্ধি যে ব্যাটা তোমাক আজ মজা দেখাবো। তোমার এমনিতেই খালি পেট, এই অবস্থায় তোমায় আরো ৩ ঘন্টা না খেয়ে বসিয়ে রাখবো। ১ ঘন্টা, ২ ঘন্টা, ৩ ঘন্টা পার হয়ে গেলো খেতে দিলাম না। তখন প্রচন্ড রাগে, ক্ষোভে, হতাশায়, দুঃখে, ক্ষুধায় ফাত্তাহ বন্ধুর অবস্থা খুবই খারাপ। পারলে আমাকেই খেয়ে ফেলে এমন অবস্থা। ঠিক এই সময় আমি তার জীবনের প্রিয় খাবারগুলি সামনে এনে দিলাম। এখন আমার বন্ধু আরাম করে খাবে আর আমি বসে বসে তার খাওয়ার গ্রাফ আকবো।

কীভাবে?

X অক্ষে আমি দেখাবো যে সে কত মিনিট ধরে খাচ্ছে- ৫ মিনিট, ১০ মিনিট, ১৫ মিনিট এভাবে ৩০ মিনিট। আর Y অক্ষে আমি দেখাবো যে সময় অতিক্রম করার সাথে সাথে তার পেটে কত কেজি খাবার জমা হচ্ছে।

এইরকম অদ্ভুত এই গ্রাফ নিয়ে এখন আলোচনা করা যাক। আমরা ১ম ৫ মিনিটে তার খাওয়ার কথা ভাবি। দেখা গেল প্রথমে যখন আমার বন্ধু খাচ্ছে তখন তার গতিই আলাদা! তার প্রচন্ড উৎসাহ। ৫ মিনিটে সে পুরো ২ কেজি খাবার খেয়ে ফেললো!

এখন যদি আমি জিজ্ঞাস করি যে সে কি পরের ৫ মিনিটেও ২ কেজি খাবার খেয়ে ফেলতে পারবে? উত্তর হবে 'না'। কেন পারবে না সেটা আমরা Law Of Diminishing Marginal Utility থেকেই উত্তর পাবো। 
ধরে নিলাম পরের ৫ মিনিটে সে আরো ১ কেজি খাবার খেলো। মানে সব মিলিয়ে সে ১ম ১০ মিনিটে মোট ৩ কেজি খাবার খেলো। পরের ৫ মিনিটে দেখা গেল সে আরও একটু কম খেতে পেরেছে। প্রথমে সে যে উৎসাহ নিয়ে খাওয়া শুরু করেছিল সেই উৎসাহ আসতে আসতে কমতে শুরু করেছে। এভাবে সময় অতিক্রম করার সাথে সাথে এবং সে খেতে খেতে মোট ৪ কেজি খাবার খেল। অর্থাৎ সে ভরপেট খানা খেয়ে ফেলেছে এখন আমি তাকে যতই খাবার দেই না কেন সে আর খেতে পারবে না। এটা হলো তার মোট খাবারের লেখচিত্র।

এখন কেউ যদি আমায় প্রশ্ন করে যে, কখন তার খাবারের গতিটা সবচেয়ে বেশি ছিল? আপনারা খেয়াল করলেই দেখতে পারবেন যে তার খাবারের গতি সবচেয়ে বেশি ছিল একেবারে শুরুতে। শুরুতে সে প্রচন্ড গতিতে খাচ্ছিল এবং সময় বাড়ার সাথে সাথে তার খাবারের গতি ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছিল।

এখন যদি তার খাবারের গতির একটা কার্ভ আকাই তাহলে কেমন দেখাবে?
প্রথমে তার খাবারের গতি অনেক বেশি, শেষের দিকে তার খাবারের গতি একেবারে নিম্নমুখী এবং খেতে খেতে গতি একেবারে শূণ্যের কোঠায় চলে গেল।

এখানে আমরা দুটো গ্রাফ পেলাম। একটা হলো কি পরিমাণ খাবার খেলো তার কার্ভ আর একটি হলো এই খাবারগুলি সে কেমন গতিতে খেলো তার কার্ভ। এই যে, মোট কি পরিমাণ খেলো তা থেকে আমরা খাবারের গতির একটা কার্ভ বের করে ফেললাম, এরই মাঝে আসলে একটা দারুণ কাজ আমরা করে ফেললাম। ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাস!

আপনি যদি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ গণিতবিদকে উপরের ১ম কার্ভটি দেখিয়ে বলেন যে স্যার এটা হলো আমার কার্ভ। এটাকে ডিফারেন্সিয়েট করলে কি হবে তার একটা কার্ভ আঁকেন।  উনিও এমন ধরণের নিচের ২য় কার্ভটি একে দিবেন।

এই যে কোন একটি কার্ভ কত দ্রুত কিংবা কত ধীরে পরিবর্তিত হচ্ছে, সেটা বের করা, এ ব্যাপারটাই ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাসের কাজ।

আমি পোস্টের শুরুতে বলছিলাম যে ঢাল নিয়ে আলোচনা করবো। ক্যালকুলাসের প্রাথমিক ধারণা নিয়ে আলোচনা করতেই পোস্টটি বড় হয়ে যাচ্ছে। তাই আমি আগামী পোস্টে ঢাল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো ইনশাল্লাহ।

বিঃদ্রঃ বিষয়টিকে সহজভাবে উপস্থাপনের জন্য অনেক প্রভাবককে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয় নি। তথ্য এবং কনসেপ্ট বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। স্পেশিয়ালি থ্যাংক্স টু 'চমক হাসান স্যার'। ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি। ঘরে থেকেই অর্থনীতি চর্চা করুন, সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।

Join to our Facebook Page- Click Here
Email: mail.nhrahat@gmail.com

Post a Comment

0 Comments