Law of Diminishing Marginal Utility
অর্থনীতিতে উপযোগ এবং উপযোগের সাথে সম্পর্কিত ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযোগ বিধি নিয়ে আজকের এই আর্টিকেল।যতদূর পারি সহজ ভাষায় তুলে ধরার চেষ্টা করছি। কেউ বুঝতে না পারলে অবসশ্যই কমেন্ট করবেন।
উপযোগ (Utility) কি?
সাধারণ ভাষায় কোন দ্রব্যের অভাব পূরনের যে ক্ষমতা তাকেই উপযোগ বলে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে পানির ক্ষমতা হল পানি আমাদের তৃষ্ণা মেটায়। রুটির ক্ষমতা হল রুটি আমাদের ক্ষুধা নিবারণ করে। প্রতিটি দ্রব্যেরই অভাব পূরণের ক্ষমতা আছে। এই ক্ষমতাকেই বলছি উপযোগ বা Utility.
মার্শালীয় উপযোগ তত্ত্বে অনুমান করা হয়েছে যে, উপযোগকে সংখ্যার সাহায্যে পরিমাপ করা যায়। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে সংখ্যাগত উপযোগকে (Cardinal Utility) তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
(i) মোট উপযোগ ( Total Utility)
(ii) গড় উপযোগ ( Average Utility)
(iii) প্রান্তিক উপযোগ (Marginal Utility)
মোট উপযোগ: কোন পণ্যের বিভিন্ন একক ভোগ করে যে উপযোগ পাওয়া যায় তার সমষ্টিকে মোট উপযোগ বলে। অর্থাৎ মোট উপযোগ নির্ভর করে পণ্যের পরিমাণের উপর। পণ্যের পরিমাণ বেশি হলে বা বাড়তে থাকলে মোট উপযোগের পরিমাণ বাড়বে।
If A is a good. Then utility function implies that, U=f(A)
So, according to defination or condition total utility implies that, TUA=UA1+UA2+UA3+…..+UAN
গড় উপযোগ: মোট উপযোগকে পণ্যের পরিমাণ দ্বারা ভাগ করলে যে ফল পাওয়া যায় তাকে গড় উপযোগ বলে।
Average Utility = TU/N
Here, TU= Total Utility and N=Quantity of Goods
প্রান্তিক উপযোগ: কোন পণ্যের ভোগের পরিবর্তনের ফলে মোট উপযোগের যে পরিবর্তন হয় তার অনুপাতকে প্রান্তিক উপযোগ বলে। অর্থাৎ, অতিরিক্ত এক একক পণ্য ভোগের ফলে মোট উপযোগের মধ্যে যে পরিবর্তন হয় তাকে প্রান্তিক উপযোগ বলে।
Marginal Utility=Change in Total Utility/Change in Quantity Consumed
ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযোগ(Diminishing Marginal Utility) বিধি কি?
কোন নির্দিষ্ট সময়ে একটি পণ্য ক্রমাগত ভোগ করতে থাকলে ঐ পণ্যের প্রান্তিক উপযোগ(Marginal Utility) কমতে থাকে। পণ্য ভোগের পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে প্রান্তিক উপযোগ কমে যাওয়ার এই নিয়মকেই ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযোগ বিধি বলা হয়।
বইয়ের ভাষায় একটু কঠিন লাগছে? আচ্ছা সহজভাবে বাস্তব উদাহরণ দ্বারা ব্যাখ্যা করা যাক। ভোক্তার আচরণ তুলে ধরা যাক-
উদাহরণস্বরূপ: আপনি খুব-ই তৃষ্ণার্ত। আপনার পানি খেতে ইচ্ছে করছে। আপনি ১ গ্লাস পানি খেলেন। পানি খেয়ে আপনি তৃপ্তি পেলেন অনেকটা। তার মানে পানি আপনার অভাব পূরণ করলো। আপনার তৃষ্ণা মেটালো। পানির এই ক্ষমতাকেই বলছি উপযোগ বা Utility.
তাহলে আপনার মোট উপযোগের (Total Utility) পরিমাণ ১ গ্লাস পানি এবং প্রান্তিক উপযোগের (Marginal Utility) পরিমাণ ১ গ্লাস পানি খাওয়ায় যতটুকু তৃপ্তি পেয়েছেন, ঠিক ততটুকু। এখন আবার আপনি ১ গ্লাস পানি খেলেন, তাহলে আপনার মোট উপযোগের পরিমাণ হলে ২ গ্লাস পানি, প্রান্তিক উপযোগের পরিমাণ হবে ২য় গ্লাস পানি খাওয়ায় যতটুকু তৃপ্তি লাভ করেছেন, ততটুকু। তাহলে এখন প্রশ্ন হল আপনি ১ম গ্লাস পানি পান করে যতটুকু তৃপ্তি লাভ করেছেন, ২য় গ্লাস পানির ক্ষেত্রেও কি একই পরিমাণ তৃপ্তি লাভ করেছেন?
আবার ৩য় গ্লাস পানি পান করলেন আপনি, তাহলে মোট উপযোগ হবে ৩ গ্লাস পানি। ৩য় গ্লাস পানি খেতে গিয়ে দেখছেন যে আপনার আর পানি খেতে ইচ্ছে করছে না। পানি পান করার ইচ্ছা চলে যাচ্ছে। অর্থাৎ যত গ্লাস পানি পান করছেন, মোট উপযোগের পরিমাণ বাড়ছে কিন্তু পানি পান করে যে স্যাটিসফ্যাকশন বা তৃপ্তি এটা কমে যাচ্ছে।
অর্থাৎ আপনি যদি ক্রমাগত পানি পান করতে থাকেন তাহলে গ্লাসের সংখ্যা তথা মোট উপযোগ বাড়তে থাকবে এবং মোট উপযোগ বাড়ার সাথে সাথে আপনার আর পানি পান করার ইচ্ছা থাকবে না, অর্থাৎ প্রান্তিক উপযোগ কমতে থাকবে।
উল্লেখ্য, অর্থনীতিতে ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযোগ বিধির প্রবক্তা হলেন হেনরিক গোসেন। পরবর্তীতে অধ্যাপক মার্শাল এই বিধির পূর্ণতা দান করেন।
এবার এই ব্যাপারটাই একটা টেবিলের আলোকে বোঝা যাক-
Units
|
Total Utility
|
Marginal Utility
|
1st Glass
|
20
|
20
|
2nd Glass
|
32
|
12
|
3rd Glass
|
40
|
8
|
4th Glass
|
42
|
2
|
5th Glass
|
42
|
0
|
এখানে টেবিল শিডিউল থেকে দেখা যাচ্ছে যে,
১ম গ্লাস পানি পান করার ক্ষেত্রে, মোট উপযোগ (Total Utility- TU) এর পরিমাণ ২০ এবং প্রান্তিক উপযোগ (Marginal Utility-MU) এর পরিমাণ ২০।
২য় গ্লাস পানি পান করার ক্ষেত্রে TU=৩২ এবং MU=১২,
৩য় গ্লাস পানি পান করার ক্ষেত্রে TU=৪০ এবং MU=৮,
৪র্থ গ্লাস পানি পান করার ক্ষেত্রে TU=৪২ এবং MU=২,
৫ম গ্লাস পানি পান করার ক্ষেত্রে TU=৪২ এবং MU=০
অর্থাৎ দেখতেই পাচ্ছি যে, মোট উপযোগ বাড়ার সাথে সাথে প্রান্তিক উপযোগ হ্রাস পাচ্ছে বা কমে যাচ্ছে। যেটাকে আমি বলছি যে ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযোগ বিধি বা Law of Diminishing Marginal Utility.
উল্লেখ্য যে, ১ম গ্লাস পানি পান করায় মোট উপযোগ এবং প্রান্তিক উপযোগ সমান থাকছে। যখনই মোট উপযোগ বাড়তে থাকছে তখনই প্রান্তিক উপযোগ কমতে থাকছে এবং দেখা যাচ্ছে যে এক পর্যায়ে প্রান্তিক উপযোগ শূন্য এবং মোট উপযোগ সর্বোচ্চ।
তাহলে এবার গ্রাফ আকারে দেখা যাক,
এইখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, পানি পান করা তথা গ্লাসের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মোট উপযোগের পরিমাণ বেড়েই চলছে।
এবং পানি পান করা তথা গ্লাসের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রান্তিক উপযোগের পরিমাণ কমেই চলছে।
কিছু কথাঃ Law of Diminishing Marginal Utility এর তত্ত্বটি অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ম মেনে চলে না। এই বিধি অনুসারে আমি বলছিলাম যে, একটি নিদির্ষ্ট সময়ে ক্রমান্বয়ে কোন কাজ করতে থাকলে মোট উপযোগের পরিমাণ বাড়তেই থাকবে এবং প্রান্তিক উপযোগের পরিমাণ কমতেই থাকবে। উদাহরণস্বরুপ বলা যায় যে, আমরা যখন পড়তে বসি তখন প্রথম অবস্থায় খুব তাড়াতাড়ি পড়া মাথায় ঢুকে যায়, তারপর আস্তে আস্তে বিরক্ত লাগা শুরু করে। অর্থাৎ সময় বাড়ার সাথে সাথে মোট পড়ার পরিমান বাড়ে এবং আস্তে আস্তে ওই নির্দিষ্ট সময়ে পড়ার আগ্রহ কমতে থাকে। এই বিধি কার্যকরের ক্ষেত্রে একটা বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে সেটি হলো সময়ের যে গ্যাপটি সেটি ন্যূনতম হতে হবে। অর্থাৎ আপনি পড়তে বসার পর পড়তে পরতে বিরক্ত লাগা শুরু করলে আপনি যদি উঠে ফ্রেশ হয়ে একটু হাটাহাটি করে চা খেয়ে আবার পড়তে বসেন তাহলে কিন্তু আপনার পড়ার আগ্রহ না কমে উলটো বাড়তে থাকবে। আবার আরেকটি জিনিস মনে রাখতে হবে যে কিছু ক্ষেত্রে একটি কাজ করতে থাকলে যে ওই কাজের আগ্রহ আস্তে আস্তে না কমে বরং ওই কাজের আগ্রহ আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। যেমনঃ কোন প্রিয় সঙ্গীত শিল্পির গান যদি আমরা শুনতে থাকি তাহলে দেখা যায় যে যতই শুনি ততই ভাল্লাগে , ভালোলাগার আগ্রহ আসতে আসতে না কমে বরং বাড়তে থাকে।
ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে, আমাদের সাথেই থাকুন। অন্যদিন অন্য কোন বিষয় নিয়ে হাজির হব। ততদিন ভাল থাকুন, অর্থনীতির সাথেই থাকুন।
আমাদের ফেসবুক পেজ এ যেতে -এখানে ক্লিক করুন-
Email: mail.nhrahat@gmail.com


0 Comments