(গ্রেসামস- এর মুদ্রা বিধি)
আপনারা অনেকেই হয়ত Quantity Theory of Money পড়েছেন, সাথে সাথে গ্রেসামস- এর
মুদ্রা বিধিও পড়েছেন। যুক্তরাজ্যের রাণী এলিজাবেথের আমলে দুই ধরনের মুদ্রার
প্রচলন ছিল- স্বর্ণমুদ্রা এবং রৌপ্য মুদ্রা। একটা সময়ে দেখা গেল যে, বাজারে শুধুই রৌপ্যমুদ্রা প্রচলিত আছে- স্বর্ণমুদ্রা নেই।
রাণী বার বার স্বর্ণ মুদ্রা ছাপিয়ে বাজারে ছেড়ে এর কোন সমাধান করতে পারছিলেন না। স্বর্ণ মুদ্রা বাজারে এলেই তা কিছু দিনের মধ্যে উধাও হয়ে যায়। এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে রাণী তার অর্থ উপদেষ্টা টমাস গ্রেসামস কে নির্দেশ দেন। এ প্রেক্ষাপটে গ্রেসামস একটি বিধি প্রধান করেন। গ্রেসামসের এই গবেষণা লব্ধ বিধিকেই
"গ্রেসামস এর মুদ্রা বিধি" বা সংক্ষেপে গ্রেসামের বিধি বলে। তার এই গবেষণার
জন্য রাণী তাকে "স্যার" উপাধি প্রদান করেন। Henry Dunning Macleod, ১৮৬০
সালে স্যার টমাস গ্রেসাম এর নামে অর্থনীতির এই নিয়মটির নামকরণ করেন। স্যার টমাস গ্রেসাম
ছিলেন ১৫১৯ থেকে ১৫৭৯ সাল পর্য়ন্ত টিউডর রাজবংশের শাসনামলে একজন ধনীক ব্যক্তি ছিলেন।
তবে এর পূর্বেও আরো অনেকে এই ধারনার অবতারনা করেছিলেন। সর্বপ্রথম এই বিষয়টি উল্লেখ
করেন নিকোলাস কোপার্নিকাস। কদাচিৎ কোপার্নিকাস ল’ নামেও পরিচিত।
এ বিধি অনুসারে, বাজারে নিকৃষ্টি ও উৎকৃষ্ট মুদ্রা একই সাথে প্রচলিত থাকলে ' নিকৃষ্ট মুদ্রা উৎকৃষ্ট মুদ্রাকে বাজার থেকে বিতাড়িত করে'। ( Bad money drives away good money out of circulation)
নিকৃষ্ট এবং উৎকৃষ্ট মুদ্রা- বিষয়টি আপেক্ষিক। যেমন
রৌপ্য মুদ্রার তুলনায় স্বর্ণ মুদ্রা উৎকৃষ্ট। আবার বিনিময় মূল্য সমান হলেও অভ্যন্তরীণ মূল্য অসমান হতে পারে। যেমন - একই ওজনের রৌপ্য এবং স্বর্ণ মুদ্রার গায়ে এক টাকা লেখা থাকলে উভয় প্রকার
মুদ্রার বিনিময় মূল্য সমান। কিন্তু রৌপ্য মুদ্রার তুলনায়
স্বর্ণ মুদ্রার অভ্যন্তরীণ- ব্যবহারিক মূল্য বেশি। কারণ মুদ্রা গলানোর মাধ্যমে অন্য প্রয়োজনে ব্যবহার করলে তার মূল্যমান এক টাকার
চেয়ে অনেক বেশি হয়। কাজেই এক্ষেত্রে রৌপ্য মুদ্রা নিকৃষ্ট এবং স্বর্ণ
মুদ্রা উৎকৃষ্ট। এমতাবস্থায় কারও হাতে স্বর্ণ মুদ্রা থাকলে তা ঐ ব্যক্তি অধিক মূল্য প্রাপ্তির প্রত্যাশায়
হাতে ধরে রাখে। এজন্য বাজারে শুধু রৌপ্য মুদ্রার প্রচলণ দেখা যায় এবং স্বর্ণ মুদ্রা মানুষ নিজের
কাছে রেখে দেয় ভবিষৎ এ বেশি মূল্য প্রাপ্তির প্রত্যাশায়। আর এইভাবেই নিকৃষ্ট মুদ্রা উৎকৃষ্ট মুদ্রাকে বাজার থেকে
বিতাড়িত করে।
গ্রেসামস এ সমস্যর সমাধান হিসেবে এমর্মে উপসংহার
টানেন যে, বাজারে এমন মুদ্রার প্রচলণ করতে হবে যেন তাদের বিনিময় মূল্যের চেয়ে অভ্যন্তরীণ
মূল্য কম হয়। তাহলে জমানো, গলানো কিংবা অন্য কোন কারণে কেউ আর মুদ্রা হাতে ধরে রাখবে না।
মূলত তিনটি কারণে নিকৃষ্ট মুদ্রা উৎকৃষ্ট মুদ্রাকে বাজার থেকে বিতাড়িত করে -
১. গলানো ( Melting) : বাজারে উৎকৃষ্ট এবং নিকৃষ্ট দুই ধরনের ধাতব মুদ্রা প্রচলিত থাকলে অধিক লাভের আশায়
উৎকৃষ্ট ধাতব মুদ্রা গলানোর মাধ্যমে অন্য কাজে ব্যববহার করে। যার বাজার মূল্য ঐ ধাতব
মুদ্রার থেকে বেশি। উদাহরণ সরূপ যদি বলি, ১ টাকা মূল্যের একটি স্বর্ণ
মুদ্রা ও একটি রৌপ্য মুদ্রা পাশাপাশি বাজারে প্রচলিত আছে। উভয় প্রকার মুদ্রার বাহ্যিক মূল্য সমান হলেও রৌপ্য মুদ্রার তুলনায় স্বর্ণ মুদ্রার
অভ্যন্তরীণ মূল্য অনেক বেশি।
২. জমানো ( Hoarding) : লোকজন জমাতে চাইলে উৎকৃষ্ট মুদ্রা জমায়, নিকৃষ্ট মুদ্রা জমায় না। তাছাড়াও লোকজন সবসময় নিকৃষ্ট মুদ্রা দ্বারা লেনদেন সম্পন্ন করে এবং উৎকৃষ্ট মুদ্রা
জমা রাখে।
৩. বৈদেশিক দেনা পরিশোধ ( Payment of foreign debt) : সাধারণত এক দেশের মুদ্রা অন্য দেশে চলে না।তাই বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে বিদেশিরা দেশীয় মুদ্রার পরিবর্তে উৎকৃষ্ট ধাতব মুদ্রা গ্রহণ করে।
মূলত সে থেকেই রৌপ ও স্বর্ণ মুদ্রার পরিবর্তে তামা, দস্তা এবং আধুনিক কাগজি নোটের প্রচলন ঘটে যা গলানো কিংবা জমানোর মাধ্যমে কেউ অধিক লাভবান হতে না পারে।
দয়া করে ভূলত্রুটি এবং টাইপিং মিস্টেক ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আপনার মতামত কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। গঠনমূলক মন্তব্য সবসময় গ্রহণযোগ্য।
মো: হাবিবুর রহমান
অর্থনীতি বিভাগ (2017-18)
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়



0 Comments