গিফেন গুডঃ
গিফেন গুড এমন এক গুড যেটা কিনা সাধারন ইকোনোমিক্স ল ফলো করে না। এইটা এক ধরণের প্যারাডক্স। মাঝে মাঝে গিফেন গুডের ব্যাপারটি নিয়ে অনেকেই কনফিউশনে পড়ে যায়। আজকের পোস্টে গিফেন গুড সম্পর্কে বিস্তারিত উদাহরণসহ লেখা হলো।
ফাত্তাহ একজন দিনমজুর, সে দিন আনে দিন খায়। কখনো ইট ভেঙে, কখনো
মাটি কেটে, কখনো বা কুলীগিরি করে সে অর্থ উপার্জন করে থাকে এবং তার যে উপার্জন তা দিয়ে
তার ৬ সন্তান ও স্ত্রীর মুখে ভাত তুলে দেয়াটা বড্ড কঠিন। এমনও দিন থাকে যে, সে কোন
কাজই জোটাতে পারে না, সেসব দিনগুলোর কথা না হয় তোলা থাক।
যেহেতু তার উপার্জন কম, এবং বাজারের চালের দাম তার নাগালেত বাইরে,
সেহেতু সে এক উপায় বের করেছে, সে বিভিন্ন চালের আড়তে পড়ে থাকা চাল কিনে নেয় কম মূল্যে
এবং পরিবারের মুখে ভাত তুলে দেয়। তার মতই এরকম অনেক স্বল্প আয়ের মানুষ আছে যারা এরকম
চাল কম দামে কিনে থাকে।
যখন বাজারে চালের দাম বেড়ে যায়, তখন ফাত্তাহ তার এই চাল বেশি
করে কিনে রাখে, যাতে ভবিষ্যতে তাকে বেশি দামে এই চাল না কিনতে হয় অথবা তাকে অভুক্ত
থাকতে না হয়। সে শুধু একা নয়, তার মত অন্যান্য স্বল্প আয়ের মানুষও এই কাজ করে থাকে।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, অর্থনীতির সূত্র তো বলে চালের দাম বাড়লে
চাহিদা কমে যাওয়ার কথা! কিন্তু এতো দেখি সাক্ষাৎ উল্টো! তারমানে কি অর্থনীতির সূত্র
ভুল!
অর্থনীতির সবথেকে জরুরী তত্ত্ব হচ্ছে চাহিদা ও যোগানের তত্ত্ব।
এই তত্ত্ব বলছে যে চাহিদা এবং যোগান যেখানে মিলে যায় সেই দামে ক্রেতা কিনতে রাজি এবং বিক্রেতা বেচতে
রাজি। যখন যোগান বেড়ে যায়, পণ্যের দাম কমে যায় এবং যোগান কমে গেলে পণ্যের দাম বেড়ে
যায়। আবার চাহিদার সাথে দামের সম্পর্ক হলো, চাহিদা বাড়লে দাম বাড়ে এবং চাহিদা কমলে
দাম কমে। অর্থাৎ দেখতেই পাচ্ছি যে যোগান ও দামের সম্পর্ক উল্টো এবং চাহিদা ও দামের
সম্পর্ক হলো সোজা।
কিন্তু অর্থনীতির এই নিয়ম সব সময় খাটে না। গিফিন দ্রব্য এমন
একটা দ্রব্য যা এই নিয়ম মানে না। মানে দাম বাড়লে এগুলোর চাহিদা বাড়ে এবং দাম কমলে
চাহিদা কমে।
গিফিন দ্রব্যগুলোর ব্যাপারে প্রথম গবেষণা করেন স্কটিশ অর্থনীতিবিদ
Robert Giffen। তিনি দেখলেন স্কটল্যান্ডের শ্রমিকরা আলুর দাম কমলে আলু কম খায়
এবং আলুর দাম বাড়লে আলু বেশি খায়। অর্থনীতির তত্ত্ব অনুযায়ী ব্যাপারটি হওয়ার কথা
ছিল উল্টো।
অর্থনীতিবিদরা ওই সময়ে জানতেন যে, বিলাস জাত দ্রব্যের ক্ষেত্রে
দাম বাড়লে চাহিদা বাড়ে কারণ ধনী ব্যাক্তিদের ক্ষেত্রে তাদের সম্পদ ও প্রতিপত্তি দেখানোর
এটি একটি পন্থা। তাই দাম বাড়লে ধনী ব্যাক্তিরা সেই জিনিস বেশি করে কেনে। কিন্তু আলু
তো অতি সাধারণ খাওয়ার বস্তু, তাহলে এমন কেন হয়?
অর্থনীতিবিদ রবার্ট গিফেন দেখলেন যে, শ্রমিকদের আয় যদি না বাড়ে
এবং আলুর দাম যদি কমে যায় সেক্ষেত্রে তারা আলু কম করে কেনে এবং বাকী টাকা দিয়ে তারা
মাংস কেনে। অর্থাৎ আলুর দাম কমে যাওয়া মানেই তাদের পরোক্ষ ভাবে আয় বেড়ে যাওয়া। তাই
আলুর দাম কমলে তারা আলু কম কিনছে অন্য দ্রব্য কেনার জন্য। আবার যখন আলুর দাম বাড়ে
তখন তাদের বাকি টাকা দিয়ে মাংস কেনা সম্ভব হচ্ছে না তাই তারা বেশি করে আলুই কিনছে।
গিফিনদ্রব্যের দাম কমে গেলে আপনার ক্রয় ক্ষমতা বেড়ে যায় যেমনটা হয় আপনার আয় বেড়ে
গেলে কিন্তু সত্যিকারের আয় আপনার বাড়ে না। সাধারণ ভাবে রোজকার খাবারগুলো এই গিফিন
দ্রব্যের আওতায় পড়ে যেমন সাধারণ ভাবে আপনি রুই মাছ খান কিন্তু তার দাম কমে যাওয়ায়
রুই মাছ বাবদ মোট মাসিক খরচ কমে গেল। এবার দেখলেন কদিন কম রুই মাছ খেলে আপনার পক্ষে
একদিন জম্পেশ করে ইলিশ মাছ খাওয়ার সুযোগ হবে তখন আপনি রুইয়ের দাম কমলেও তা কম খাচ্ছেন।
আবার রুইয়ের দাম বাড়লে ইলিশ বন্ধ।
আপনাকে আমি পুরো গিফেন দ্রব্য ব্যাখ্যা করলাম কিন্তু তা যদি
আমি গ্রাফে না দেখাই, তবে অনেকেই মনঃক্ষুণ্ণ হতে পারেন। তাই নিচে সহজ ভাবে নরমাল গুড
এবং গিফেন গুডের ডিমান্ড কার্ভ উপস্থাপন করলাম। তাহলেই আশা করি আপনারা পার্থক্য বুঝতে
পারবেন।
আপনি এই গ্রাফটি খেয়াল করুন, এটি হচ্ছে সাধারণ দ্রব্য ও গিফেন দ্রব্যের চাহিদা রেখা -
নরমাল গুডঃ
যখনই দাম কমছে, চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে, বা উল্টো করে বললে, দাম
বেড়ে গেলে চাহিদা কমে যাচ্ছে। অতএব আপনি এমন এক রেখা পাবেন যা বাম দিক থেকে ডান দিকে
নিম্নগামী, অর্থাৎ ঋণাত্মক সম্পর্ক প্রকাশ করছে।
গিফেন গুডঃ
এখানে দাম যতই বাড়ছে, চাহিদা ততই বেড়ে যাচ্ছে, অর্থাৎ ধণাত্মক
সম্পর্ক, অতএব আপনি এমন এক রেখা পাবেন যা বাম দিক থেকে ডান দিকে উর্ধ্বগামী।
এই যে সাধারণ দ্রব্যের চাহিদা রেখার সাথে গিফেন দ্রব্যের চাহিদা
রেখার অমিল রয়েছে, এ কারণেই গিফেন দ্রব্যকে আলাদা করে বিচার করা হয়।
ধন্যবাদ সবাইকে, আমাদের সাথেই থাকুন। অন্যদিন অন্য কোন বিষয়
নিয়ে হাজির হব। ততদিন ভাল থাকুন, অর্থনীতির সাথেই থাকুন। কারো কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন এবং প্রতিনিয়ত আপডেট পেতে আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিন।
আমাদের ফেসবুক পেজ এ যেতে -এখানে ক্লিক করুন-

0 Comments